সাওম

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - ইবাদাত | | NCTB BOOK
19
19

সাওম

সাওম বা রোযা ইসলামের তৃতীয় রুকন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক সবার ওপর রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। সাওমের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলা নিজেই দেবেন। পানাহার না করার কারণে রোযাদার ব্যক্তির মুখে যে ঘ্রাণ তৈরি হয়, তা আল্লাহ তা'আলার নিকট মিশকের সুগন্ধ থেকেও অধিক প্রিয়। রমযান মাস, সিয়াম পালন, তারাবিহর সালাত ও লাইলাতুল ক্বদর সবই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য বিশেষ উপহার।

পূর্বের শ্রেণিতে তোমরা সাওম পালন সম্পর্কে বেশ কিছু বিধি-বিধান শিখেছ। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তোমরা সাওমের প্রস্তুতি, রমযান মাসের ফযিলত, লাইলাতুল ক্বদরের মাহাত্ম্য, ঈদ ও ঈদের দিন সম্পর্কে জানতে পারবে। তোমরা যথাযথভাবে সাওম পালন করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী মানবিক জীবন গঠন করতে পারবে। তাহলে চলো! এবার আমরা মূল আলোচনা শুরু করি।

প্রিয় শিক্ষার্থী, ইবাদাত অধ্যায়ে সাওম সম্পর্কে আলোচনার শুরুতে তুমি/তোমরা বিগত রমযান মাসে যেসব ইবাদাত করেছ, তোমার বন্ধুর সঙ্গে সেসব ইবাদাতের অভিজ্ঞতা বিনিময় করো। তুমি/তোমরা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে বিগত রমযান মাসের স্মৃতিচারণ করে যা যা পেলে, তা নিচের ছকে লিখে ফেলো।

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোযা। সাওম দ্বীন ইসলামের অন্যতম প্রধান রুকন। ইসলামি শরিয়তে সালাতের পর সাওম একমাত্র সর্বজনীন ফরয ইবাদাত। অর্থাৎ রমযান মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মু'মিন ব্যক্তির ওপর সাওম পালন করা ফরয। এক মাসের সিয়াম সাধনা মু'মিন ব্যক্তিকে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি অর্জনে সাহায্য করে। ফলে ইবাদাতের প্রতি ইখলাস তৈরি হয়।

সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকার দরুন রোযাদারের ধৈর্য বৃদ্ধি পায়, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা-সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। প্রত্যেক ইবাদাতেরই সাওয়াব রয়েছে। কিন্তু হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা'আলা রোযা সম্পর্কে বলেছেন, 'রোযা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেব।' তোমরা সপ্তম শ্রেণিতে সাওম পালন সম্পর্কে বিস্তারিত শিখেছ। অষ্টম শ্রেণিতে তোমরা সাওমের প্রস্তুতি, রমযান মাসের ফযিলত, লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্য ও ঈদুল ফিতর সম্পর্কে জেনেছ। তারই ধারাবাহিকতায় নবম শ্রেণিতে তোমরা যেসব পরিস্থিতিতে সাওম পালন নিষিদ্ধ, যেসব অবস্থায় রোযা ভাঙা বৈধ, ফিদিয়ার বিধান, ইবাদাত হিসেবে সাওমের গুরুত্ব এবং সাওমের নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবে। আশা করি, তোমরা সাওমের শিক্ষা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। তাহলে চলো, আমরা আলোচনা শুরু করি।

যেসব পরিস্থিতিতে সাওম পালন নিষিদ্ধ

আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি ইবাদাতকে তাঁর বান্দাদের জন্য সহজসাধ্য করেছেন। তিনি সাধ্যাতীত কোনো কিছুকে বান্দার ওপর চাপিয়ে দেননি। পূর্ববর্তী ইমানদারদের মতো প্রত্যেক সুস্থ, সবল, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর আল্লাহ তা'আলা এক মাস সিয়াম পালন ফরয করেছেন। এছাড়া রমযান পরবর্তী দিনগুলোতেও সিয়ামের বিশেষ ফযিলত ও গুরুত্ব রয়েছে।

তবে এমন কিছু দিন ও অবস্থা রয়েছে, যাতে রোযা রাখা হারাম। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এবং তার পরের তিন দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ও যিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখসমূহ বছরে এই পাঁচটি দিনে যেকোনো ধরনের রোযা রাখা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

সাহাবি হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি ও মুসলিম)

আর নারীদের ক্ষেত্রে হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) এবং নেফাস (সন্তান জন্মদানের পর রক্তস্রাব) অবস্থায় রোযা রাখা নিষেধ। তবে পরবর্তী সময়ে যখন সুস্থ হবে, তখন উক্ত রোযাগুলো কাযা করতে হবে।

যেসব অবস্থায় সাওম ভাঙা বৈধ

কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে তার সাওম বা রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে।

সফর অবস্থায় অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি তিন মঞ্জিল (৪৮ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার) বা তার অধিক পথ অতিক্রম করে, তার রোযা পালন করা বা না করা উভয়ের অনুমতি রয়েছে। তবে বেশি কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ

গর্ভবতী কিংবা স্তন্যদাত্রী নারী নিজের কিংবা সন্তানের জীবননাশের আশঙ্কা করলে রোযা ভঙ্গের অনুমতি রয়েছে। মহানবি (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তা'আলা মুসাফিরের অর্ধেক নামায কমিয়ে দিয়েছেন (চার রাকা'আত বিশিষ্ট নামায দুই রাকা'আত পড়বে) আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী নারীদের রোযা ভঙ্গের অনুমতি দিয়েছেন (আবু দাউদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ তাদের জন্য এ সময় রোযা না রেখে পরবর্তী সময়ে তা পূরণ করার অনুমতি রয়েছে।

যে রোযাসমূহ বিশেষ অবস্থায় ভঙের অনুমতি রয়েছে, পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করা ওয়াজিব।

ফিদিয়ার বিধান

ফিদিয়া অর্থ কাফফারা, মুক্তিপণ ইত্যাদি। এমন অসুস্থ বা বৃদ্ধ ব্যক্তি, যার সুস্থতার আশা করা যায় না অথবা যদি কোনো ব্যক্তি রোযার কাযা আদায় না করে মারা যায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে রোযার ফিদিয়া আদায় করতে হবে। রোযার ফিদিয়া হলো এক ফিতরা পরিমাণ অর্থাৎ অর্ধ সা' বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা সমপরিমাণ মূল্য প্রতিটি রোযার পরিবর্তে কোনো মিসকিনকে প্রদান করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ 

অর্থ: (আর যদি কারো জন্য রোযা রাখা নিতান্তই কষ্টকর হয়) তাহলে সে (প্রতিটি রোযার পরিবর্তে) ফিদিয়া হিসেবে একজন অভাবীকে খাওয়াবে। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

সাহাবি হযরত আনাস (রা.) বৃদ্ধ হওয়ার পর এক কিংবা দুই বছর রোযা রাখতে পারেননি। তাই প্রতি রোযার পরিবর্তে তিনি একজন মিসকিনকে গোশত-রুটি খাইয়েছেন। (ফাতহুল বারি) প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে ইফতার ও সাহরি খাওয়ালেও ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে। শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান কোনো ব্যক্তি রোযা না রেখে ফিদিয়া আদায় করলে তা জায়েয হবে না।

 

একক কাজ 

'ফিদিয়ার প্রযোজ্য ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করো' 

(উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক তুমি ফিদিয়ার প্রযোজ্য ক্ষেত্রগুলো উপস্থাপন করো)।

 

ইবাদাত হিসেবে সাওমের গুরুত্ব

আরবি 'সাওম' শব্দের অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোযা। যা পালন করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর ফরয। রোযার অনেকগুলো প্রকার রয়েছে, তন্মধ্যে রমযান মাসের রোযা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি ওজর (বিশেষ অপারগতা) এবং রোগ ব্যতীত রমযানের একটি রোযা ভাঙল, তার সারা জীবনের রোযা দ্বারাও এর কাযা আদায় হবে না। যদিও সে সারা জীবন রোযা রাখে'। (বুখারি)

একজন মু'মিনের আত্মশুদ্ধির ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের অন্যতম মাধ্যম হলো সিয়াম বা রোযা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ 

অর্থ: হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

অন্যান্য ইবাদাত মানুষকে দেখানো যায় বলে এতে রিয়া বা লৌকিকতার সম্ভাবনা থাকে। আর রোযা এমন একটি বিশেষ ইবাদাত যা রোযাদার নিজে জানতে পারে। চাইলেও কাউকে দেখানো যায় না। তাই আল্লাহ তা'আলা এর বিশেষ প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন।

হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, 'মহান আল্লাহ বলেন,

 الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ

অর্থ: রোযা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দিব'। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রিয় নবি (সা.) বলেন, 'রোযাদারের জন্য দুইটি খুশি। একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।' (বুখারি ও মুসলিম)

সিয়াম সাধনার ফলে রোযাদার অনাহার, অর্ধাহার ও পিপাসায় থাকা মানুষ কতটা দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করে তা অনুভব করতে পারে। ফলে রোযাদার সমাজের সকলের প্রতি বিশেষভাবে অসহায়, গরিব-দুঃখীদের প্রতি - সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে।

আগুনের তাপ যেভাবে একটি বাঁকা কাঠকে সোজা করে তোলে, তেমনিভাবে রোযা বান্দার কলবের রিপু দূরীভূত করে লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা, ক্রোধ, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, পরনিন্দা, ঝগড়া-ফাসাদ, অশ্লীলতার চর্চা প্রভৃতি থেকে মুক্ত করে। এতে আমাদের দৃষ্টি নিজের অক্ষমতা ও অপারগতা এবং আল্লাহ তা'আলার কুদরতের দিকে নিবদ্ধ হয়। অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়। পাশবিকতা ও পশুত্ব অবদমিত হয়। আমাদের চরিত্রে পশুসুলভ গুণের অবদমন ও ফেরেশতাসুলভ বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় এবং রুহানি (আত্মিক) শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই অন্তর আত্মার পশুত্ব দমনে রোযার কোনো বিকল্প নেই।

 খাবার গ্রহণের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রোযাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এ সবকিছু থেকে বিরত থাকেন। ফলে রোযাদার অন্তরাত্মাকে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অভ্যস্ত হন। মহানবি (সা.) বলেন,

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَجْرِي مِنْ ابْنِ آدَمَ مَجْرَى الدَّمِ فَضَيِّقُوْا مَجَارِيَهُ بِالْجُوْعِ

অর্থ: নিশ্চয়ই শয়তান মানব শরীরের রক্তের মতো চলাচল করে, তাই তাদের চলাচলের পথকে ক্ষুধার মাধ্যমে সংকোচন করে দাও। (তাবকাতুশ শাফী'ইয়্যাহ)

আর রমযান মাসে রোযা রাখার মধ্য দিয়ে সারা দিন প্রচণ্ড ক্ষুধা-তৃষ্ণা সত্ত্বেও পানাহার পরিহার করতে হয়। রাতে দীর্ঘ সময় তারাবির নামায আদায় এবং ভোররাতে ঘুম ভেঙে সাহরি গ্রহণ করতে হয়। এর মাধ্যমে রোযাদারের ধৈর্যের পরীক্ষা হয়। যারা এ পরীক্ষায় সফলতা লাভ করে, পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন,

وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ

অর্থ: রমযান মাস ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। (মিশকাতুল মাসাবিহ)

তিনি আরো বলেন- اَلصَّوْمُ نِصْفُ الصَّبْرِ অর্থাৎ রোযা ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অর্ধেক। (তিরমিযি )

সাওমের নৈতিক শিক্ষা

সাওম এমন এক ইবাদাত যা সাওম পালনকারীকে দান করে সজীবতা, হৃদয়ের পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, আত্মিক তৃপ্তি, নতুন উদ্দ্যম ও প্রেরণা। সাওমের বিশুদ্ধতা যখন বান্দার অন্তর ছাড়িয়ে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পৌঁছে যায়, তখন ঐ ব্যক্তি হয় সর্বোচ্চ নীতিবান। তাঁর হাত দ্বারা কোনো অন্যায় হয় না। সে কাউকে অশালীন ও বিব্রতকর কথা বলে না। সাওমের অন্যতম নৈতিক শিক্ষা মিথ্যা পরিত্যাগ করা। কোনো ব্যক্তি সাওম পালন করা সত্ত্বেও মিথ্যা বলার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে না পারলে তার রোযা রাখা আর না রাখার মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

সাওমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ হতে বিরত থাকার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। সাওম অবস্থায় আমাদের অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া এবং ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। কেউ যদি রোযাদারকে গালি দেয় বা সংঘাতে লিপ্ত হয়, তাহলে রোযাদার শুধু বলবে, 'আমি রোযাদার'।

সাওম আমাদের ইমান ও তাকওয়ার নৈতিক শিক্ষা দেয়। একজন মু'মিনের নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া পূর্বের জীবনের গুনাহ মাফ, যা সাওমের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

অর্থ: যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সাওয়াবের আশায় রমযানের রোযা রাখবে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)

হাদিসে রোযাকে ঢালস্বরূপ বলা হয়েছে। তবে মিথ্যা কথা ও গিবত দ্বারা রোযার বরকত নষ্ট হয়। হালাল রিযিক আহার রোযার অন্যতম শর্ত। রোযার মূল উদ্দেশ্য হলো অন্তরের পাশবিকতা নির্মূল করা, যা হারাম খেয়ে কখনো সম্ভব নয়। রোযা মানুষকে কাম ক্রোধসহ সকল রিপুকে দমন করে।

সাওমের সামাজিক শিক্ষা

সাওম মানুষকে ভোগে বিতৃষ্ণ, ত্যাগে উদ্বুদ্ধ এবং আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে তোলে। পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই শুধু সাওম নয়; বরং সমাজের অবহেলিত অসহায় মানুষদের দুঃখ, দুর্দশা, ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা অনুভব করা এবং তাদের প্রতি সদয় হওয়াকে বোঝায়। রমযান মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করা সাওমের অন্যতম শিক্ষা। মহানবি (সা.) নিজে বেশি বেশি দান-সদকা করতেন এবং রমযান মাস এলে তার দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। সাওমের এই ত্যাগের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হলে সমাজে সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বীজ অঙ্কুরিত হয়। সমাজে মানুষে মানুষে উঁচু-নীচু ভেদাভেদ দূর হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'এ মাস (রমযান মাস) সহানুভূতির মাস। (ইবনে খুজায়মা)

সাওমের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শিক্ষা অশ্লীলতা, গালিগালাজ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়েছেন।

রমযান মাস আসলে দেখা যায় কিছু মুনাফাখোর মজুতদার ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়, এ কারণে সকল শ্রেণির লোক বিপাকে পড়ে। এটি সরাসরি সাওমের শিক্ষার বিপরীত।

সাওমের সামাজিক শিক্ষা বাস্তবায়িত হলে ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে সামাজিক অস্থিরতা, ঘুষ-দুর্নীতি, মিথ্যা ও চরিত্রহীনতার কলুষতা থেকে মুক্ত করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আদর্শ ও কল্যাণমুখী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

 

অনুসন্ধানমূলক কাজ

সাওম পালনের মাধ্যমে তোমার নিজের বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের জীবন-যাপনে কী কী পরিবর্তন হলো তা পর্যবেক্ষণ করো'

(উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তুমি নিজেকে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে পবিত্র রমযান মাসে পর্যবেক্ষণ করে তোমার বা তাদের মধ্যে পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করো। (পবিত্র রমযান মাসে এ কাজটি সম্পন্ন করবে।)

 

 

Content added By

Read more

Promotion